বিশ্বসেরা 10 শিক্ষকের তালিকায় আমাদের ‘রাস্তার মাস্টারমশাই’, গ্লোবাল টিচার অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে
![বিশ্বসেরা 10 শিক্ষকের তালিকায় আমাদের 'রাস্তার মাস্টারমশাই', গ্লোবাল টিচার অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে](https://wbexamguide.com/wp-content/uploads/2023/10/west-bengal-teacher-deepnarayan-nayak-won-unesco-top-10-global-teacher-award.jpg)
বিশ্বসেরা 10 শিক্ষকের তালিকা পশ্চিমবঙ্গের ‘রাস্তার মাস্টার’। বাংলার মাস্টারমশাইকে প্যারিসে গ্লোবাল এওয়ার্ড দেবে ইউনেস্কো। নাম দীপনারায়ন নায়েক। শুধু প্রথাগত বিদ্যা নয়, রোজ আদিবাসী শিশুদের জীবনের পাঠ দিচ্ছেন তিনি। পাকা চার দেয়ালের মধ্যে নয়, খোলা রাস্তাতেই তিনি প্রতিদিন ক্লাশ করে চলেছেন। সেই মাস্টারমশাইকে ইউনেস্কো বিশ্বের সেরা ১০ জন শিক্ষকের তালিকায় স্থান দিল। ভারতবর্ষের মধ্যে তিনি একমাত্র শিক্ষক, যিনি প্যারিসে ইউনেস্কোর গ্লোবাল এসেম্বলিতে গ্লোবাল টিচার্স এওয়ার্ডে সম্মানিত হচ্ছেন।
জামুরিয়ার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা তিলকামাঝি গ্রামে প্রতিদিন তার স্কুল বসে। গ্রামের আদিবাসী ছেলে মেয়েদের নিয়ে রাস্তাতেই বসে যায় তার স্কুল। গ্রামের নিকনো মাটির দেওয়াল গুলিতে ব্ল্যাকবোর্ডের মতো কালো রং করে শিক্ষা দিচ্ছেন তিনি। রাস্তাতেই চট পেতে শিক্ষার্থীরা অক্ষর চিনে চলেছে। পেন, পেন্সিল, খাতা, বই না থাকলেও পড়াশুনা চলছে। গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা বর্ণমালা অক্ষর। যাতে ছেলেমেয়েরা বাইরে পা রেখে শুধু খেলা নয়, খেলার সাথে পড়াশোনাও করে নিতে পারে। তিলকামাঝির একটি অংশ নয়, পুরো গ্রামটাই যেন তার স্কুল।
তার এই পথ চলা লকডাউনের আগে থেকেই শুরু হয়েছে। লকডাউন শুরু হওয়ায় তার দায়িত্ব বহুগুন বেড়ে যায়। প্রথমে তিনি একজন দুইজন ছেলেমেয়ে নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিল। তারপর সেই সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে 100 র গায়ে পৌঁছে যায়। বর্তমানে নতুন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর এখন তিনি 8ই নভেম্বর প্যারিসে ইউনেস্কোর গ্লোবাল এসেম্বলিতে গ্লোবাল টিচার্স এওয়ার্ড পাচ্ছেন।
দীপনারায়ণ নায়েক ছেলেবেলা থেকেই চরম অর্থকষ্টের মধ্যে বড়ো হয়েছে। বাবা ছিলেন একজন ওষুধের দোকানের সামান্য কর্মচারী। খুব কম টাকা বেতন পাওয়ায়, বইপত্র পর্যন্ত কিনে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না তার। অত্যাধিক দরিদ্রতার মধ্যেও পড়াশোনা করে বড় হয়েছেন তিনি। তাই গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের যাদের বড় স্কুলে পড়াশোনা করার সামর্থ্য নেই, তাঁদেরকে পড়াশোনা করাতে চান তিনি।
মাস্টারমশাই সাংবাদিকদের বলেছেন, “এই এলাকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই প্রথম প্রজন্মের পরুয়া। পিতা-মাতা, দাদু দিদা সবাই নিরক্ষর। তাই তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি, পিতা-মাতা ও দাদু দিদাদেরও ক্লাস করানো হচ্ছে। ফলে তার স্কুলে যেমন একদিকে বাবা-মা, দাদু-দিদা পড়ছে তেমন অন্যদিকে পড়াশোনা করছে তাদের ছেলেমেয়েরা। এমনকি দাদু দিদা ও তাদের নাতি নাতনিদের মধ্যে কে আগে পড়া মুখস্ত করে তা নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। এখন গ্রামের মায়েরাও নিজের নাম সই করতে জানে। তারা নিয়ম করে প্রতিদিন ক্লাসে আসে।”
পড়াশোনার পাশাপাশি চলছে ইংরেজি শিক্ষা, PT ক্লাস। যা সবটাই রাস্তাতেই হয়। শুধু পড়াশোনা নয় তার প্রচেষ্টায় গ্রামে চালু হয়েছে মোবাইল লাইব্রেরী। মোবাইল লাইব্রেরির মাধ্যমে গ্রামের এই প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে চলেছে বইগুলি। আবার কখনো অভিভাবকদের প্রচেষ্টায় বিলি করা হচ্ছে বই।
যেখানে নেই কোন জাতিভেদ, নেই কোন সংস্কার। রয়েছে শুধু অনাবিল আনন্দের সাথে পড়াশোনা ও জীবনের আসল পাঠ শেখা। তিনি এতদিন পর্যন্ত তার ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের কাছে ‘রাস্তার মাস্টার’ নামেই পরিচিত ছিলো। এখন থেকে সারা পশ্চিমবঙ্গ বা ভারত বর্ষ নয়, সারা বিশ্ব তাকে ‘রাস্তার মাস্টার’ বলেই চিনলো।
বিঃদ্রঃ চাকরি এবং নতুন কোনো নিয়োগের আপডেট, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, নোটস, প্রাকটিস সেট ও অন্যান্য শিক্ষা সংক্রান্ত আপডেট মিস করতে না চাইলে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ও টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হন।
Join Our Telegram group – Click Here
Join Our Whatsapp Group – Click Here